সাব্বির আহমেদ,চট্টগ্রাম:
পবিত্র কোরবানি কে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কামার পল্লীর শ্রমিকরা। কোরবানের আর মাত্র ৪ দিন বাকী। এরি মাঝে প্রচন্ড গরমের মধ্যেও আগুনের পাশে বসে চুলোয় বাতাস দিয়ে কয়লার আগুনকে আরো বেশি উত্তপ্ত করছে কামার শ্রমিকরা। সেই আগুনের তীব্র তাপে লাল হয়ে যাওয়া লোহাটিকে আর একটি লোহার ওপর রেখে দু-জন লোক পেটাচ্ছেন ভারী হাতুড়ী দিয়ে। আর এতে তৈরি হচ্ছে দাঁ, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল। তৈরিকৃত এসব লোহার পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর অলি-গলির দোকান ও জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। অপরদিকে বাড়ীঘরে পড়ে থাকা দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত (ভোতা) দা, ছুরি, বটি কোরবান উপলক্ষে সানাই দিতে মানুষ নিয়ে আসছে কামারের দোকান গুলোতে।
পবিত্র ঈদ-উল আজহা অর্থাৎ কোরবানিকে সামনে রেখে গত শনিবার সন্ধ্যায় এমন ব্যস্ততা দেখা গেছে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন সাগরিকা রোড ও হালিশহর ফইল্যাতলী বাজারের কামারের দোকান গুলোতে। কামারদের একটু দম ফেলার ফরসুত নেই। দা. বটি, ছুরি সানাই দেয়ার দরদাম নিয়ে কারো সাথে কথা বলার সময় নেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কোরবান করবে এমন মানুষের উপচে পড়া ভীড় দেখা গেছে কামারের দোকান গুলোতে। কারো হাতে পুরাতন দা, কারো হাতে বটি নিয়ে দাড়িয়ে আছে দোকানের সামনে। আবার কোরবান উপলক্ষে কামারদেও তৈরীকৃত নতুন দা, ছুরি, বটির পসরা সাজিয়ে বসেছে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের অলি-গলির মোড়ে মোড়ে। চলছে হরধম বেচা বিক্রি।
কামার শ্রমিক নারায়ন দাশ জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিন-রাত নতুন ভাবে দাঁ, বটি, ছুরি তৈরি করতে হচ্ছে। আবার মানুষের বাড়ি ঘরে পড়ে থাকা পুরাতন দা, বটি গুলো কোরবানির সময় এসে সান দিতে হচ্ছে। দেখাগেছে কোরবানের এক সাপ্তাহ পূর্ব থেকে কামারের দোকান গুলোতে প্রচন্ড ভীড় লেগে আছে। তাই বছরের এই একটি সময়ে কামারেরা ব্যস্ত থাকেন। প্রতি বছরই এ সময়ে কামারদের জমজমাট ব্যবসা হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর একটু ভিন্ন চিত্র দেখা দিয়েছে। লোকজন এবার আগে ভাগেই কেনাকাটা শুরু করায় মালামাল তৈরিতে খুবই চাপ বেড়েছে তাদের।
তিনি আরও জানান, এক কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে চারশ টাকা পর্যন্ত। বটি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি চারশ টাকা। সাধারণ বটি আকার অনুযায়ী ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। পশু জবাই করার চাকু মাপ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চামড়া সেলাইয়ের চাকু ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, সাধারণটি ৪০ থেকে ৮০টাকা এবং হাড় ভাঙার জন্য চায়নিজ কুড়াল ৫০০ ও বাংলাদেশী কুড়াল ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পুরাতন দা, বটি সানাই দিতে নেয়া হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সানাই দিতে মানুষ দিনরাত ভীড় জমাচ্ছে কামারের দোকান গুলোতে। তাদের দোকানে সানাইয়ের দা, বটি বেশী জমে যাওয়ায় অনেকের মালপত্র ফেরৎ দিতে দেখা যাচ্ছে।
দাঁ ও বটি কিনতে আসা হালি শহরের গৃহবধু তারেকুন নেছা বলেন, কোরবানির ঈদে পশু জবাই করার জন্য একটু আগে ভাগেই দাঁ ও ছুরি কিনতে এসেছি। ঈদের কাছাকাছি সময়ে আসলে ভালো মানের গুলো পাওয়া যায় না। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার দাঁ-ছুরির দাম স্বাভাবিক রয়েছে।