নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাইরে দেখলাম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমি মুক্তি দেয়ার কে? আমি তো মামলা দেইনি, বিচারও করিনি। জেলে দিয়েছেন, তার তিন প্রিয় ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন আর মঈনুদ্দিন। আর বিচার করেছেন আদালত। তার দলের এতো শিক্ষিত শিক্ষিত আইনজীবীরা কী করলেন?
রোববার কানাডার টরন্টোতে এক নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে কুইবেকের লা শ্যাতো ফ্রন্টেন্যাক হোটেলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানাডা আগমন উপলক্ষ্যে টরেন্টোর মেট্টো কনভেনশন সেন্টারে কানাডা আওয়ামী লীগ ১০ জুন, সন্ধ্যা ৬টায় এক সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করে। একই সময়ে কানাডা বিএনপি কনভেনশন সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করে। এদিন বিকেল ৫টা থেকে মেট্টো কনভেনশন সেন্টারের সামনের রাস্তায় ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও কালো পতাকা প্রদর্শন করেন। শেখ হাসিনা সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হওয়ার সময় বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
তাদের সেই দাবির জবাবে নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি রাজনৈতিকভাবে জেলে দিতাম, তাহলে তিনি যখন বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারলেন, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পবিত্র কোরআন পুড়ালেন, গাছ কেটে সাবার করলেন, তখন মামলা দিয়ে পারতাম। আমি তো তা করিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন আসামি, সাজাপ্রাপ্ত। তার জন্য আবার গৃহকর্মী দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামির জন্য গৃহকর্মী দেওয়া হয়, এটা কি আপনারা কোথায় শুনেছেন বলেন? এটাও তো একদিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন। একটা মানুষ কোনো অন্যায় করল না, অপরাধ করল না, কিন্তু তাঁকে জেল খাটতে হচ্ছে। মনিবের কথায়। সে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করল মনিবের কথায়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কানাডায় অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনি নূর চৌধুরী, আমেরিকায় রাশেদ চৌধুরী এবং মেজর ডালিমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে জাতিকে অভিশাপ মুক্ত করতে হবে। নূরকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা আইনি লড়াই করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আট বছর প্রবাসের দুর্বিসহ রিফুজি জীবনযাপন করে নানান প্রতিকূল অতিক্রম করে দেশে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি আমার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসীরা যেমন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে, তেমনি অর্থনীতিকেও মজবুত করে। আমরা শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলছি। আপনারা সেখানে বিনিয়োগ করুন। মহিলা এবং প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অর্জন আকাশ থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত। আমরা যেমন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আকাশ বিজয় করতে সক্ষম হয়েছি, তেমনি সাব মেরিনের মাধ্যমে সমুদ্র বিজয় করেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির মাধ্যমে স্বল্পোন্নত থেকে দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে। যার ফল পাচ্ছে, দেশের সাধারণ মানুষ। এখন দেশের ৯৩% মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছে। আমরা জরিপ করে দেখেছি, দেশে এখন মাত্র দুই লাখের মানুষ ভূমিহীন। আমরা তাদের জন্যও কর্মসূচি নিচ্ছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, জি-৭ ধনী রাষ্ট্রের সম্মেলন। আজ বাংলাদেশ এই সম্মেলনে যোগদানের পেছনে রয়েছে উন্নতশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা লাভ।
স্থানীয় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গোলাম মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং আজিজুর রহমান প্রিন্সের পরিচালনায় সংবর্ধনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক হানিফ, আব্দুস সালাম এবং সেলিম জুবেরী।
আগামীকাল টরন্টো থেকে শেখ হাসিনা দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে সকালে কানাডার মিয়ানমার বিষয়ক দূত বব রে, কানাডার সাসকাচোয়ান প্রদেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী জেরেমি হ্যারিসন এবং কমার্শিয়াল কোঅপারেশন অব কানাডার প্রেসিডেন্ট মার্টিন জাবলোকির সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
তিনি কানাডার স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে টরন্টো থেকে দেশের পথে রওনা হবেন এবং দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি করে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।