নিজস্ব প্রতিবেদক
গণসংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনাস্থলে আসেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনাস্থলের মঞ্চে উঠলে নেতা-কর্মীরা দাঁড়িয়ে দলীয় পতাকা নাড়িয়ে অভিবাদন জানান। বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীও হাত নেড়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের অভিবাদন জানান।
‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড়’ সংবর্ধনায় যোগ দিতে বেলা ১১টা থেকেই উৎসব আমেজে দলে দলে সংবর্ধনাস্থলে আসেন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কালারফুল উপস্থিতি গণ সংবর্ধনাকে ভিন্নমাত্রার রুপ নিয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলার নেতা ও দলীয় এমপিরা নেতাকর্মীরা বিশাল বহর নিয়ে দলীয় নেত্রীর সংবর্ধনা সফল করতে অংশ নেয়। শনিবার দুপুর তিনটায় দিকে সংবর্ধণার মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার আগে দলের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করেন।
শনিবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। সংবর্ধণায় প্রধানমন্ত্রী সন্তান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এই আয়োজনে উপস্থিত হয়েছেন।
এর আগে, গত ৭ জুলাই শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণার কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে গত ১৯ জুন দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৭ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২১ জুলাই বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই গণসংবর্ধনা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড অর্জন ও ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে তার দল আওয়ামী লীগ।
এর আগে আজকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সংবর্ধনার অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছিলেন নেতারা। বৃহস্পতিবার গণসংবর্ধনার প্রস্তুতি পরিদর্শন এসে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে বড় গণসংবর্ধনা হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা, রাষ্ট্রনায়ক, দেশরত্ন শেখ হাসিনার সংবর্ধনা জনতার সমুদ্রে পরিণত হবে। সারাদেশের সব শাখাকে আমরা আমন্ত্রণ করিনি। তারপরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেতাকর্মী আসবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় সংবর্ধনা। এতে দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দনপত্র পাঠ ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
সংবর্ধনা উপলক্ষে এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সেখানে এরই মধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে বেশ কয়েকটি স্টল। এগুলোতে শেখ হাসিনার শৈশব থেকে বর্তমান পর্যন্ত চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে শেখ হাসিনার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ। শেখ হাসিনার লেখা বইগুলোও থাকছে একটি স্টলে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর সর্বস্তরের জনগণের জন্য চিত্র প্রদর্শনী ও বুক স্টল উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
গণভবন থেকে সংবর্ধণাস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার পথে রাস্তাগুলো বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুনে অজর্ন সাফল্যগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে প্যান্ডেলের একদিকে ২০ হাজার, আরেকদিকে ১০ হাজারসহ মোট ৩০ হাজার আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর বাইরেও গোটা উদ্যানজুড়ে কয়েক লাখ লোক সংবর্ধনায় অংশ নিয়েছেন।
বেলা এগারটার দিকে দেখা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিন নেতার মাজার গেট, রমনা কালি মন্দির গেট, বাংলা একাডেমী গেট, টিএসসি গেট, চারুকলা গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীরা প্রবেশ করা শুরু করে। বেলা এগারটায় আগেই থেকেই নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করে। এরপর বেলা ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে প্রবেশপথগুলো খুলে দিলে নেতাকর্মী ভিতরে প্রবেশ শুরু করে। সময় বাড়ার সাথে নেতাকর্মীদের উৎসব আমেজে বিশাল বিশাল বহর সংবর্ধনায় যোগ দিতে আসতে শুরু করে। বিশেষ করে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা লাল সবুজ গেঞ্জি ও ক্যাপ পরিহিতের কারণে সংবর্ধনাকে কালারফুল করে তোলে। বাদ্য বাজনা, ঢাক ঢোল, ব্যান্ড পার্টি, ভুজুজেলাসহ শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সংবর্ধনা সফলের লক্ষে যোগ দিচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথগুলোতে আর্চওয়ের ভিতর দিয়ে কঠোর তল্লাশির মাধ্যমে নেতাকর্মীরা ভিতরে প্রবেশ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশসহ শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় যানচলাচল সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে।