নিজস্ব প্রতিবেদক :
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দিন বদলের ফসল হিসেবে খ্যাত সয়াবিন বৃষ্টির হানায় কৃষকের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। সয়াবিনের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে উপকূলীয় উপজেলা রায়পুর। এতে দিন বদলের ফসল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আর ব্র্যান্ডিং নামকরণ করা হয়েছে ‘সয়াল্যান্ড’ হিসেবে। প্রায় ২৫ বছর ধরে এখানে বাণিজ্যিকভাবে সয়াবিনের চাষ করা হচ্ছে। দেশের মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগ সয়াবিন এ উপজেলা থেকে যোগান দেওয়া হয়। কম খরচ, অল্প সময়ে অধিক ফসল ও বেশি লাভজনক হওয়ায় এখানকার কৃষকরা সয়াবিন চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। দেশের খ্যাতনামা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পোল্ট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী যেমন, সিটিগ্রুপ, বিশ্বাস গ্রুপ, নারিশ, সিপি, এস.আলম ও আফতাব গ্রুপসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলো এ উপজেলা থেকে সয়াবিন সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সয়াবিনের। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, রায়পুর উপজেলায় এবার ৭ হাজার ৩৭৯ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষ করা হয়েছে। সম্প্রতি ৮-১০ দিন ভারী বৃষ্টি ও থেমে থেমে ঝড়-বৃষ্টির কারণে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমির সয়াবিন পঁচে গেছে। এখনো মাঠে অধিকাংশ কাঁচা সয়াবিন রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকায় ঐ সয়াবিনে ধরেছে পঁচন। পঁচে যাওয়ার ভয়ে অনেকে কাঁচা সয়াবিন কেটে নিচ্ছেন। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে অনেক কৃষক ক্ষেত থেকে পাকা সয়াবিনও তুলতে পারেন নি। এ অবস্থায় কয়েকদিন ধরে কৃষকদের স্কুল কলেজে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদেরও ফসল তুলতে দেখা গেছে। গত বছর সয়াবিন তোলার আগেই টানা বৃষ্টিতে চাষীদের দিন বদলের ফসলের সর্বনাশ হয়েছিল। ক্ষেত থেকে বৃষ্টির পানি অপসারণ ব্যবস্থা না থাকায় এবারো বিভিন্ন স্থানে কাঁচা-আধাপাকা সয়াবিন পানিতে ডুবে গেছে। আর ভালো সয়াবিন ঘরে আনতে না পারার কারণে দামের দিক থেকেও কৃষক বঞ্চিত হচ্ছেন। অপরদিকে বেশিরভাগ কৃষকই জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। তারা বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অধিক লাভের আশায় সয়াবিনের চাষাবাদ করছে। ঝড়-বৃষ্টির হানায় সয়াবিন পঁচে যাওয়ায় ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের কৃষক হানিফ বেপারী বলেন, এবার এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় ৩ একর জমিতে সয়াবিন চাষ করি। ফলনও হয়েছিল ভালো। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে আমার স্বপ্ন পানিতে ভেসে গেছে। অনেক সয়াবিন স্তুপ করে রাখার কারনে পঁচে গেছে। কিভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করবো এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির আহম্মেদ বলেন, ‘এ উপজেলায় ব্যাপকহারে সয়াবিন উৎপাদিত হয়। আমরা সয়াবিন চাষীদের দোড়গোড়ায় গিয়ে বিভিন্নরকম পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবার সয়াবিনের বাম্পার ফলন সত্ত্বে ও অসময়ের বৃষ্টির কারণে প্রায় অর্ধেক সয়াবিন নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আমাদের এখানে সয়াবিন “দিন বদলের ফসল” হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে